প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডার মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূতকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে কর্মরত বিদেশি ত্রাণকর্মীদের ভিসা সমস্যা সমাধান করা হবে।
কানাডার বিশেষ দূত বব রে রোববার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার হোটেল স্যুটে দেখা করতে এলে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি দেখাশোনা করছে। কারণ ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে অনেক বিদেশি নাগরিক রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ত্রাণকর্মীর বেশে বহু বিদেশি নাগরিকের অনুপ্রবেশে ব্যাপারে সরকার শঙ্কিত, যা নারী ও শিশু পাচার, যৌন অপব্যবহার, সন্ত্রাস এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি বলেন, সরকার এ সমস্যা সমাধানে ত্রাণকর্মীদের জন্য বিশেষ ক্যাটাগরী ভিসা ইস্যু করছে। এ ব্যাপারে কোন সমস্যা দেখা দিলে তা সরকারকে জানানোর জন্য তিনি বিশেষ দূতকে অনুরোধ করেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বব রে প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তিনি ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শনের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করছেন।
বব রে বলেন, পরিদর্শনকালে তিনি সহিংসতার কারণে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্দশা স্বচক্ষে দেখেছেন। তিনি বলেন, ১০ লাখ মানুষকে আশ্রয় দেয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন।
প্রেস সেক্রেটারী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং বব রে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য ভোগান্তির বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। ওই এলাকায় ভূমিধস, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দূতকে জানান, প্রশিক্ষিত লোকজনের একটি দল যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুত রয়েছে। এতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বর্ডার গার্ড, সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও রয়েছে।
পরে সাসকাটচেওয়ান প্রদেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং বাণিজ্য ও রফতানি উন্নয়ন মন্ত্রী গর্ডন ওয়েন্ট কিউসি এবং অভিবাসন ও ক্যারিয়ার ট্রেনিং মন্ত্রী জেরেমি হ্যারিসন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার হোটেল কক্ষে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
তারা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে আলোচনা করেন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বহু বছর ধরে কানাডার বিশেষ বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানান। তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা স্মরণ করে বলেন, শিক্ষা ও নার্সিং খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদারের অনেক সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কমার্শিয়াল কর্পোরেশন অব কানাডার প্রেসিডেন্ট ও সিইও নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে। প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ীরাও ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ডের (বিডা) চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মিজানুর রহমান এসময় উপস্থিত ছিলেন।